প্রথম পাতা

ভূমিকা

ইসলামে ‘ছেলায়ে রেহমী’ তথা পারিবারিক সম্পর্ক অটুট রাখা ও ঐক্যবদ্ধতার উপর জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে এবং এতদুভয়কে পরিত্যাগ করার কারণে কঠিন ধমকি বর্ণিত হয়েছে।
পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী:

۞وَءَاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُۥ [الاسراء: ٢٦]

“আর নিকট আত্মীয়ের অধিকার আদায় করো।” [সূরা বনী ইসরাইল: ২৬]

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন-

وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡ‍ٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ۞ [النساء: ٣٦]

“আর আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না, এ ছাড়া মাতা-পিতার সাথেও উত্তম আচরণ করো, আর উত্তম আচরণ করো নিকটাত্মীয়ের সাথে” [সূরা আন-নিসা: ৩৬]

আত্মীয়তা রক্ষা না করার ব্যাপারে ধমকি:

আল্লাহ তাআলার বাণী-

فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ۞ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ [محمد: ٢٢، ٢٣]

“তোমরা শীঘ্রই এ থেকে ফিরে যাবে এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আর যারা এরূপ করবে, তাদের ওপরই আল্লাহর অভিশম্পাত বর্ষিত হবে। আর এ ধরনের লোকদেরকেই বধির এবং অন্ধ করে দেওয়া হবে” [সূরা মুহাম্মাদ: ২২-২৩]

তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেনো আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষা করে চলে” [বুখারী ৬১৩৮]


একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

لَيْسَ الوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ، وَلَكِنِ الوَاصِلُ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا

তাকে প্রকৃত আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষাকারী বলা যতেে পারে না, যে শুধু ততটুকুই করে যতটুকু তার আত্মীয়দের সাথে করে থাকে বরং প্রকৃত আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষাকারী তাকেই বলা যেতে পারে, যে ব্যক্তি তার আত্মীয়দের সাথে সর্ম্পক ছিন্ন করলেও সে তা রক্ষা করে চলে [বুখারী: ৫৯৯১]

ঐক্যবদ্ধতা:
মুসলিম উম্মাহ পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং নিজেদের একতা ও সংহতি রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক ফরজ। ইসলাম তাওহীদের দ্বীন এবং ঐক্যের র্ধম। এখানে শিরকের সুযোগ নেই এবং অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ তথা এক আল্লাহর ইবাদত এবং এক আল্লাহর ভয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ۞ فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ زُبُرًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ  فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّى حِينٍ

নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো! এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমাকে ভয় কর। এরপর তারা নিজেদের দ্বীনের মাঝে বিভেদ করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেলো। প্রত্যেক দল (নিজেদের খেয়ালখুশি মতো) যে পথ গ্রহণ করলো, তাতেই মত্ত রইলো। সুতরাং (হে পয়গম্বর) তাদেরকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মূর্খতায় ডুবে থাকতে দাও। (সূরা মুমিনূন : ৫২-৫৩)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آَيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ۞ [آل عمران:١٠٣]

তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভেদ কোরো না। স্মরণ করো, যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে, তখন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তোমাদের অন্তরসমূহ একে অপরের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেনে। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো। তোমরা তো ছিলে অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের মুক্ত করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যেনো তোমরা পথপ্রাপ্ত হও। (সুরা আলে ইমরান, ১০৩)

উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের নির্দেশের আলোকে প্রতীয়মান হলো যে, পারিবারিক সর্ম্পক এবং ঐক্যবদ্ধ থাকা ইসলামের এক অপরিহার্য বিধান, যা পরিত্যাগ করা বা অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। সেই গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখেই আবনায়ে আবূ বকর রহ. দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠন করেছে এই ফাউন্ডেশন। আল্লাহর ফজলে যার সফলতা গতিশীল হয়ে উঠছে এবং অল্প সময়ে তা অনেক দূর এগিয়েছে। সবার মাঝে এর ব্যাপক সাড়াও পড়েছে। আল্লাহ তাআলা জনাব আলহাজ আবু বকর সিদ্দীক রহ. এর বংশধরদের দ্বীনের উপর অটুট থেকে কেয়ামত পর্যন্ত বাকী রাখুন। আর আস সিদ্দীক ফাউন্ডেশনকে কবুল করুন। আমীন।