‘যে জাতির ইতিহাস নেই সে জাতির কোন গ্রনযোগ্যতা নেই’ এটি একটি প্রবাদ বাক্য। আমরা এটিকে খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ইতিহাস প্রবাহমান পানির ন্যায় চলমান। ইতিহাস মানুষকে উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে এবং অতীতকে সংরক্ষণ করতে উৎসাহ যোগায়। একথা অনস্বীকার্য যে, ইসলামের অনেক ঘটনাবলী এখনো শীর্ষ চূড়া দখল করে আছে। আর এর কারণ হচ্ছে, তাদের (মুসলমানদের) এক সোনালী ইতিহাস রয়েছে যা তাদেরকে আজও উচ্চ মর্যাদার সিংহাসনে পৌঁছে দেয়। যার ফলে দুনিয়া তাদের পদতলে চলে আসে এবং তারা রাজাধিরাজদেরকে গোলামের মত মনে করে।
মানব ইতিহাস একটি সাশ্ত্র। যার উপর শিক্ষার্থীরা থিসিস করে। এবং তারা এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
আমরা ইতিহাস সম্পর্কে মোটা মোটা কয়েকটি কথা আলোচনা করবো। যদ্দারা ইতিহাস বিদ্যার গুরুত্ব ফুটে ওঠে।
ইতিহাস:
নিঃসন্দেহে ইলমে ইতিহাস গ্রহনযোগ্যতা ও দৃঢ়তার জন্য অন্য সব বিদ্যার ন্যায় তাতে ঘটনার স্থান, ব্যাক্তি এবং প্রত্যক্ষদর্শীর গ্রহনযোগ্যতার উপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর বুকে কোন মানুষের জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পরে তাকে কেন্দ্র করে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইতিহাস সৃষ্টি হয়। এগুলোকে মানব ইতিহাস বলা হয়।
ইতিহাসের গুরুত্বঃ
ইতিহাস প্রাচীন বিশ্বের সূক্ষ্ম ও পরিষ্কার একটি রূপরেখা এবং পুর্বেকার মানুষদের অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে তুলে ধরে। যা পাঠ করার দ্বারা পূর্ববর্তীদের ভুলভ্রান্তি ও তাদের ধ্বংসমাঝে পা ফেলা থেকে পরবর্তীরা বেচে থাকার দিক নির্দেশনা পায়।
ইতিহাস হলো প্রাচীন কাল সম্পর্কীয় অধ্যায়ন। যা ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহন করতে সাহায্য করে। সুতরাং প্রাচীন সভ্যতা ও তার গড়ে ওঠা এবং তার ক্ষয়-ক্ষতি ও কল্যান- অকল্যান সম্পর্কে জানার দ্বারা নিশ্চয় একটা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবো এবং পূর্ববর্তীদের ভুল-ভ্রান্তি, অসাফল্য থেকে বাঁচতে পারবো।
ইতিহাস মানুষকে তার বাপদাদা ও অস্তিত্বমূলের সাথে সম্পৃক্ত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ইসলামী ইতিহাস এর জ্বলন্ত প্রামান। আমরা নবী করীম (স.) এর সীরাত অধ্যায়নের মাধ্যমে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে পারি। ইসলামী ইতিহাসের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নবী করীম (স.) এর পবিত্র সীরাত।
সীরাতের মাঝে নবীজীর জীবনী, এবং তাঁর জীদ্দশায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা এবং যুদ্ধ বিগ্রহের ঘটনাবলী সন্নিবেশিত রয়েছে। অনুরুপভাবে ইতিহসের মাধ্যমের নবুওয়াতের পবিত্র যুগ সম্পর্কে অবগত হই। যাতে নবীজীর কথা, কাজ ও সমর্থনকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর একেই তো হাদিস বলা হয়!
ইতিহাস জাতিকে ন্যায়পরায়ন করে দেয় এবং পূর্ববর্তীদের রেখে যাওয়া সম্পদ সংরক্ষণে সাহায্য করে। কখনো প্রাচীন তত্ব ও সম্পদের মাধ্যমের এক দেশ অন্য দেশ থেকে পার্থক্য ও স্বকীয়তা লাভ করে। আর ইতিহাসের মাধ্যমেই তার সংরক্ষিত হয়।
ইতিহাস প্রাচীন সাধারণ গ্রাম্য লোকদের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে পূর্বেকার মানুষদের সফলতা হেতু ও পদ্ধতী সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। এবং বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা, দর্শন, জ্ঞান বিজ্ঞানকে মিলিয়ে এর তারতম্য করা হয়। কারন সর্বকালের চিন্তা চেতনা এক নয়।
ইতিহাস যে অস্তিত্ব রক্ষা এবং সফলতার সিড়ি তার প্রমান হলো, সর্বকালে সর্ব শ্রেণির মানুষেরা তাদরে উন্নতির লক্ষে ইতিহাসকে হাতিয়ার বানিয়েছে। মুসলিম অমুসলিম হকপন্থী বেদআতী সকলেই একটা ইতিহাসকে কেন্দ্র করে তাদের আদর্শ স্থির করে। হয়তো কাহারো ইতিহাস সঠিক ও সত্য আবার কাহারোটা বেঠিক ও মিথ্যা। কিন্তু কথা সেটা নয়। কথা হলো সবাই নিজেরদের ইতিহাস সংরক্ষণ করা চেষ্টা করে। এটাকে তারা উন্নতির মাধ্যম মনে করে। আর বস্তবেও তাই। আমি মুসলিম হিসেবে উন্নতি করতে চাইলে আমার থাকতে হবে এক সোনালী ইতিহাস।
আমাদের দেশের রাতনৈতিক লোকদের দেখেন। তারা একটা বিশেষ ইতিহাসকে সামনে রেখে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
বাংলাদেশেরও রয়েছে এক গৌরবময় ইতিহাস। সবাই ফায়দা লোটার জন্য ওই ইতিহাসকে ব্যবহার করে। কেউ বাংলাদেশকে ভালবাসে আবার স্বার্থ হাসিল করে। কিন্তু সবার হাতির হলো ওই যে, ইতিহাস।
আমারা যে ইলম কালাম নিয়ে চলার দাবী করি। আমাদের ইলমের উৎস কি? সেই ইতিহাসই তো। হাদিসও তো ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও বিভিন্ন মুসান্নেফ (রহ.) তার রচিত হাদিসের কিতাবে ইতিহাসের জন্য ভিন্ন অধ্যায় রচনা করেছে। খোদ বুখারীর দিকে নজর দিলেই আমরা দেখতে পাবো। আমাদের কওমী বা দেওন্দী ঘরাণার কুতুবখানাতে যদি তারীখে বাগদাদ, তারীখে ইবনে খালদূন, তারীকে ইবনে খালকান, বিদায়া নিহায়া, তাবারী ইত্যাদি না থাকে সেসব কুতুবখানাকে আমরা গণ্যই করিনা।
এতেই তো সহজেই বুঝা যায় যে, আমরা যে আলেম বা হুজুর দাবী করি, এর সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক কতটা গভির তা সহজেই অনুমেয়।
কিন্তু কথা হলো আমরা ইতিহাস নিয়ে কতটা ভাবি? ১০০ ভাগের ১ ভাগও ভাবিনা। আবার আমরা উন্নতির দাবী ও আশা করি।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলতে চাই আসুন আমরা সবাই ইতিহাস অধ্যায়ন আলোচনা কে নিত্যদিনের কাজ বানাই।
প্রথমত আমাদের সবাইকে সীরাত আয়ত্ব করা আবশ্যক।
অতঃপর ইসলামের ইতিহাসের নুন্যতম ধারণা রাখতে হবে।
এরপর পৃথিবীর ইতিহাস।
এরপর নিজের বংশের ইতিহাস।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন আমীন