سوال وجواب عن الإمام المهدي عليه السلام (بنغالي) ইমাম মাহদি আ. সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্নোত্তর

ইমাম মাহদীর পরিচয়, আত্মপ্রকাশ ইত্যাদি বিষয়ে অনেক দিন থেকেই সামাজিক মাধ্যমে নানান প্রচারণা অপপ্রচারণা চলছে। সম্প্রতি সৌদিতে কথিত ইমাম মাহদির সাক্ষাত লাভে ‘হিজরত’ চেষ্টায় কয়েকজন গ্রেফতার হওয়ায় বিষয়টি এবার মূল ধারার গণমাধ্যমেও চলে এসেছে।

বস্তুত, ইমাম মাহদী, দাজ্জাল, ঈসা আ. এগুলো সম্পর্কে প্রত্যেক সচেতন মুসলমানেরেই পরিস্কার ধারণা থাকা চাই। কারণ, এ বিষয়ে যেমন কতককে যেমন বাড়াবাড়ি করতে দেখা যায়, তেমনি একটি শ্রেণী এটাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেও দেখা যায়।

বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য ইসলামী পত্রিকা মাসিক আল কাউসার থেকে এ বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন-উত্তর তুলে দেওয়া হল। এতে ইমাম মাহদীর বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা খুব সুন্দরভাবে ফুটে ওঠেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে পত্রিকাটিতে লেখা হয়েছে,

ইমাম মাহদীর পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য

ক) ইমাম মাহদী ফাতেমা রা-এর বংশে জন্মগ্রহণ করবেন্

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী হবে ফাতেমার বংশধর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৮৬)

খ) মাহদী রা.-এর নাম হবে মুহাম্মাদ এবং তার পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যদি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মাত্র একদিনও বাকি থাকে তবুও-আল্লাহ তাআলা ঐ দিনকে দীর্ঘ করবেন এবং আমার বংশের এক ব্যক্তিকে  প্রেরণ করবেন। তার নাম আমার নামের সাথে এবং তার পিতার নাম আমার পিতার নামের সাথে মিলে যাবে। (অর্থাৎ তার নাম হবে মুহাম্মাদ ও তার পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮১; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২২৩০)

উপরোক্ত হাদীসে কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদীর আগমনের বিষয়টি এবং তার নাম ও বংশের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ) মাহদী রা. নবী হবেন না। তিনি হবেন একজন নেককার ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তিনি মুসলমানদের খলীফা হবেন।

আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নেককার লোক বলে অভিহিত করেছেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪০৭৭)

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে মানুষ তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। (অর্থাৎ তার দিক নির্দেশনা অনুযায়ী চলার জন্য তার হাতে হাত রেখে শপথ করবে।)। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৫)

ঘ) মাহদী রা. সাত বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবেন এবং দুনিয়াতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।

আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী আমার বংশের হবে। তার চেহারা উজ্জ্বল হবে। (তার দ্বারা) গোটা দুনিয়ায় ইনসাফ কায়েম হবে। যেমনিভাবে (ইতিপূর্বে) পুরো দুনিয়ায় অন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। তিনি সাত বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪২৮৪)

উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মাহদী (খলীফা হওয়ার পর) সাত বছর বেঁচে থাকবেন। এরপর মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলমানগণ তার জানাযা পড়বে। (সুনানে আবু দাউদ, হা: ৪২৮৬)

উপরে ঈসা আ. ও মাহদী রা. সম্পর্কে কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ থেকে যে তথ্যগুলো দেওয়া হল এগুলো থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায় যে, ঈসা আ. ও মাহদী রা. ভিন্ন দুই ব্যক্তি। কিয়ামতের আগে মাহদী রা.-এর আবির্ভাব হবে এবং ঐ সময় ঈসা আ.ও আসমান থেকে অবতরণ করবেন। কিছুকাল তারা দু’জন একত্রেও থাকবেন।

সুতরাং তাদেরকে এক ব্যক্তি দাবি করার অর্থ, দু’জনের কোনো একজনকে অস্বীকার করা। অথচ ঈসা আ.-এর  দুনিয়ায় আসা, তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া এবং কিয়ামতের আগে আবার দুনিয়াতে আগমন করার বিষয়টি কুরআন মজীদ ও মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তদ্রূপ কিয়ামতের আগে ইমাম মাহদীর আগমনও মুতাওয়াতির হাদীসে রয়েছে। তিনি ফাতেমা রা.-এর বংশধর হওয়া, একজন নেককার ও ন্যায়পরায়ণ শাসক হওয়া ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিবরণও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলন করে একটি আলাদা পুস্তিকাই লিখেছেন। যা তার আলহাভী লিলফাতাভী গ্রন্থের ২য় খন্ডে বিদ্যমান রয়েছে। তাতে ২১৩-২৪৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মোট ৩০ পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসসমূহ সংকলিত হয়েছে। এরপর সুয়ূতী রাহ. লিখেছেন আবুল হাসান মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন বলেন, ইমাম মাহদীর আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।

হাফেয ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে (৬/৫৬৯) লিখেছেন, আবুল হাসান মানাকেবুশ শাফেয়ী তে বলেছেন, ইমাম মাহদী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত হবেন এবং ঈসা আ. তার পিছনে নামায পড়বেন। তার আগমন সংক্রান্ত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির।

সুতরাং ইমাম মাহদীকে অস্বীকার করার অর্থ, মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করা। অতএব এ ধরনের চিন্তা ও বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রধান মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারের মিথ্যা দাবি করেছে। কোনো সময় নিজেকে নবী ও রাসূল, কোনো সময় আদম ও মারইয়াম হওয়ার দাবি করেছে। কখনো যুগের মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবি করেছে। এমনিভাবে নিজেকে ঈসা ও মাহদী বলেও দাবি করেছে।

এমন আরো অনেক দাবি সে করেছে যেগুলো কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট মিথ্যা ও ঈমান পরিপন্থী।

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজের ব্যাপারে এ ধরনের দাবি করায় সে সময়ের সাধারণ লোকজনও বুঝতে পারত যে, লোকটি মিথ্যাবাদী। এক সময় যখন তাকে বলা হল, মাহদী ও মাসীহ তো দু’জন। আপনি একত্রে ঐ দুজন হলেন কীভাবে? তখন সে ঐ মিথ্যা দাবির সমর্থনে উক্ত বর্ণনাটি পেশ করে। অথচ ইতিপূর্বে কুরআন ও হাদীস থেকে ঈসা আ. ও মাহদী রা.-এর যে পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, তারা দু’জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি।

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ঈসা বা মাহদী নয়। কারণ ঈসা আ. ও মাহদী রা.-এর বংশ পরিচয়ের সঙ্গে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বংশ পরিচয়ের কোনো মিল নেই।

গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পিতার নাম গোলাম মুর্তজা। সে পাঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার কাদিয়ান নামক এলাকায় ১৮৩৯ মতান্তরে ১৮৪০ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করে।

পক্ষান্তরে ঈসা আ. পিতা ছাড়া আল্লাহর কুদরতে নিজ মা মারইয়ামের মাধ্যমে জন্মলাভ করেছেন। তিনি বনী ইসরাইলের নিকট নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং আল্লাহ তাআলা তাকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। কিয়ামতের আগে আসমান থেকে অবতরণ করবেন।

আর ইমাম মাহদী এখনো দুনিয়াতে আসেননি। তিনি ফাতেমা রা.-এর বংশে জন্মলাভ করবেন। তার নাম হবে মুহাম্মাদ। তার পিতার নাম  হবে আবদুল্লাহ। তাদের উভয়ের বংশ-পরিচয়, বৈশিষ্ট্য কুরআন ও হাদীস থেকে বিস্তারিতভাবে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর এ ধরনের দাবি ও বিশ্বাস মিথ্যা এবং ঈমান পরিপন্থী।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে পত্রিকাটিতে লেখা হয়েছে, ইমাম মাহদী রা.-এর আবির্ভাবের বিষয়টি অনেক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং উম্মতের‘তালাক্কী বিল কবুল’ দ্বারা সুপ্রতিষ্ঠিত। সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে শুরু করে আহলে সুন্নত ওয়ালজামাতের প্রায় সকল আলিম এ বিষয়ে একমত।*

কিয়ামতের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আহলে বাইতের মধ্য হতে এমন একজন ব্যক্তির আগমন হবে যার নাম ও পিতার নাম হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম ও পিতার নামের অনুরূপ। অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ। যার উপাধি হবে ‘মাহদী’।

ইমাম আবুল হুসসাইন মুহাম্মাদ বিন হুসাইন আল আবুরী রাহ. (৩৬৩ হি.) বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে তাওয়াতুর পরিমাণের প্রচুর হাদীসে মাহদীর আলোচনা এসেছে। একথাগুলিও খুবই বিশ্বস্তভাবে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি আহলে বাইত থেকে হবেন। তিনি সাত বছর পৃথিবীর বুকে হুকুমত করবেন, অন্যায়-অবিচারে নিমজ্জিত পুরো ভূখন্ডে ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। আসমান থেকে হযরত ঈসা আ.-এর অবতরণের পর তিনিও ইমাম মাহদীকে দাজ্জালের সাথে যুদ্ধে সহযোগিতা করবেন। তিনি উম্মতের ইমামতি করবেন এবং হযরত ঈসা আ.ও তাঁর পিছনে নামায আদায় করবেন।’ (আলমানারুল মুনীফ ১৪২)

এ বিষয়ে সহীহ-হাসান ও নির্ভরযোগ্য পর্যায়ের এত প্রচুর হাদীস রয়েছে যে, অনেক আলিম একে‘মুতাওয়াতির’ বলেছেন। ইমাম মাহদী ও তাঁর আগমন সংক্রান্ত বহু মৌলিক এবং বহু খুটিনাটি বিষয়ও এইসব হাদীসে রয়েছে। কোনো হাদীসে তাঁর শাসনামলের কথা, কোনো হাদীসে ঈসা আ.-এর সাথে তাঁর মোলাকাত ও ইমামতির কথা, কোনো হাদীসে তাঁর নাম ও বংশ পরিচয়, কোনো হাদীসে তাঁর গুণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। এভাবে হাদীসের প্রায় সব ধরনের কিতাবেই এই হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘সহীহাইন’ও ব্যতিক্রম নয়। নাম উল্লেখ ছাড়াই ঈসা আ.কে নিয়ে তাঁর ‘ইমামত’ সংক্রান্ত একাধিক হাদীস সহীহাইনেও বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন : সহীহ বুখারী হাদীস : ৩৪৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৫৫, ১৫৬, ২৯১৯, ২৯১৪)

এসব হাদীসে ‘আমীরুহুম’, ‘ইমামুকুম’ ও ‘খলীফা’ ইত্যাদি শব্দের দ্বারা উদ্দেশ্য ইমাম মাহদী। এই হাদীসগুলোরই নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েতে ‘আমীরুহুম আলমাহদী’ শব্দ উল্লেখিত হয়েছে। (দেখুন : আলমানারুল মুনীফ ১৪৭-১৭৮) তাছাড়া অন্যান্য সহীহ হাদীসে তো এই ব্যাখ্যা একেবারেই সুস্পষ্ট।

‘ইমামাতুল মাহদী’ নিয়ে হাদীসের প্রায় সকল কিতাবে স্বতন্ত্র অধ্যায় থাকার পরও শুধু সহীহাইনের হাদীসগুলোর কথা বিশেষভাবে বলার কারণ এই যে, হাদীসের এই দুটি কিতাব সাধারণ মানুষের মাঝেও প্রসিদ্ধ এবং অবশ্যই সহীহ হাদীসের সংকলন হিসেবে এই কিতাব দুটির যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, কোনো বিষয় প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহীহাইন কিংবা বিশেষ কোনো কিতাবে থাকা অপরিহার্য। বরং এ ধরনের চিন্তা অহেতুক হঠকারিতা ছাড়া আর কিছু নয়। ইমাম বুখারী রাহ. ও ইমাম মুসলিম রাহ.-এর কেউই এমন দাবী করেননি যে, সকল সহীহ হাদীস তাঁরা তাঁদের কিতাবে একত্র করেছেন বা একত্র করার ইচ্ছা করেছেন; বরং ইমাম বুখারী রাহ, নিজেই বলেন,

لم أخرج في هذا الكتاب إلا صحيحا وما تركت من الصحاح أكثر

আমি এই কিতাবে শুধু সহীহ হাদীস সংকলন করেছি। এর বাইরেও অনেক সহীহ হাদীস আছে। (তারীখে বাগদাদ ২/৯)

তেমনি একথাও সহীহ সনদে প্রমাণিত যে, ইমাম মুসলিম রাহ.-এর কিতাব তাঁরই উস্তাদ ইমাম আবু যুরআ রাযী এবং ইবনে ওয়ারা রাহ.-এর হাতে পৌঁছলে তাঁরা বলেছিলেন, তুমি সহীহ নামে কিতাব লিখে বিদআতীদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। যখন তাদের সামনে কোনো সহীহ হাদীস পেশ করা হবে তখন তারা এই বলে প্রত্যাখ্যান করবে যে, এটি তো সহীহ মুসলিমে নেই।

ইমাম মুসলিম তখন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন যে, আমি তো শুধু আমার ও আমার নিকট যারা হাদীস শিখতে আসবে তাদের স্মরণ রাখার সুবিধার্থে কিছু হাদীস সংকলন করেছি। আমি বলিনি যে, এই সংকলনের বাইরের সকল হাদীস দুর্বল; বরং আমি শুধু এটুকু বলি যে, এই সংকলনের হাদীসগুলো সহীহ। (তারীখে বাগদাদ ৪/২৭৪)

অতএব কোনো বিষয় সহীহাইনে নেই তাই প্রমাণিত নয়-এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ও অযৌক্তিক। যাহোক, সহীহাইনের বাইরেও সহীহ ও নির্ভরযোগ্যতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ অনেক হাদীস রয়েছে, যেখানে ইমাম মাহদীর নাম, বংশ-পরিচয় এবং তার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে। এমনকি খোদ ইমাম বুখারীর বিখ্যাত শাগরিদ ইমাম তিরমিযী রাহ. এই ধরনের একাধিক হাদীস সম্পর্কে ‘হাসান-সহীহ’ বলেছেন। (দেখুন : জামে তিরমিযী, হাদীস : ২২৩০-২২৩২)

সংক্ষিপ্ত পরিসরে সব হাদীস উল্লেখ করা এবং সেগুলোর সনদগত মান আলোচনা করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আলাদা কিতাব লেখা হয়েছে এবং এখনও লেখা হচ্ছে। এখানে প্রকাশিত কয়েকটি কিতাবের নাম লিখা হল।

১. আলবায়ান ফী আখবারি ছাহিবিয যামান, আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইউফুফ (মৃত্যু : ৬৫৮ হি.)

২. ইকদুর দুরার মিন আখবারিল মাহদিয়্যিল মুনতাযার, শায়খ ইউসুফ ইবনে ইয়াহইয়া আসসুলামী

৩. আলআরফুল ওয়ারদী ফী আখবারিল মাহদী, জালালুদ্দীন সুয়ূতী (৯১১ হি,)

৪. তালখীসুল বায়ান ফী আলামাতি মাহদিয়্যি আখিরিয যমান, প্রাগুক্ত

৫. আলকাওলুল মুখতাছার ফী আলামাতিল মাহদিয়্যিল মুনতাযার, ইবনে হাজার হাইতামী (৯৭৪ হি.)

৬. আলবুরহান ফী আলামাতি মাহদিয়্যি আখিরিয যামান, শায়খ আলী আলমুত্তাকী আলহিন্দী (৯৭৫ হি.)

৭. ইবরাযুল ওয়াহমিল মাকনূন মিন কালামি ইবনি খালদূন, শায়খ আহমদ আলগুমারী (১৩২০-১৩৮০ হি.)

৮. আলমাহদিয়্যিউল মুনতাযার, শায়খ আবদুল্লাহ আলগুমারী

৯. আলআহাদীসুল ওয়ারিদাহ ফিল মাহদী ফী মিযানিল জারহি ওয়াত তাদীল, ড. আবদুল আলীম আলবাসতাবী আলহিন্দী

১০. আকীদাতু আহলিল আছার ফিল মাহদিয়্যিল মুনতাযার, শায়খ আবদুল মুহসিন ইবনে হামদ আলআববাদ

১১. আলইহতিজাজু বিলআছার আলা মান আনকারাল মাহদিয়্যাল মুনতাযার, শায়খ হামূদ ইবনে আবদুল্লাহ তুয়াইজারী

১২. আকীদায়ে যুহুরে মাহদী আহাদিস কি রৌশনি মে, ড. মাওলানা নিযামুদ্দীন শামযী রাহ.।

তবে একথাও সত্য যে, সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসের বাইরে এ বিষয়টিতে জাল, অতি দুর্বল, ও অনির্ভরযোগ্য বর্ণনার সংখ্যাও কম নয়, কিন্তু এই কারণে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত বিষয়ে কোনো প্রভাব পড়তে পারে না। সহীহ হাদীসে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো এতই সুস্পষ্ট যে, সময়ে সময়ে গোলাম আহমদ কাদিয়ানির মত কিছু বিকৃত চিন্তার মানুষের মাহদী হওয়ার মিথ্যা দাবিতেও কিছু যায় আসে না।

সাথে সাথে একথাও সুস্পষ্ট যে, অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ও সুস্পষ্ট আলামত সম্বলিত ইমাম মাহদী রা.-এর সাথে শিয়া-রাফেযীদের কথিত মাহদীবাদের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। তাদের মতবিশ্বাসটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বরং ইবনুল কাইয়িমের ভাষায়, ‘পুরো মানবজাতির জন্য লজ্জাকর ও সকল বুদ্ধিমানের কাছে হাস্যকর’ শিয়া-রাফেযীদের এই মাহদীবাদ বিশ্বাসের মূল কথা হল, প্রায় বার শত বছর পূর্বে তাদের বিশ্বাস মতে-নবীদের মতো নিষ্পাপ বারজন ইমামের সর্বশেষ জন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, যার নাম মুহাম্মাদ বিন হাসান আসকারী। কিশোর বয়সে তিনি ইরাকের সামরো বা সুররা মান রাআ শহরে পানির গভীরে জলজ কুঠিরে আত্মগোপন করে গেছেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গেলেও বারশত বছর পরও তিনি পানিতে জীবিত! তারা প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করে কথিত জলজ কুঠিরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে!! সারাদিন চিৎকার করে তাকে আহবান করতে থাকে!!!

এবার আপনিই বলুন, ইমাম মাহদী সংক্রান্ত প্রশ্নের শুরুতে উল্লেখিত ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কোন কথাটির সাথে শীয়াদের এই অলীক কল্পনার মিল আছে??

শীয়াদের এই আকীদা সম্পর্কে হাফেয যাহাবী রাহ. বলেছেন, ‘বিবেকহীনতা থেকে আল্লাহর পানাহ! পূর্ব যুগে এমন কিছু ঘটেছিল বলে যদি ক্ষণিকের জন্য মেনেও নেয়া হয়, তখন প্রশ্ন হল, এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কে? এতদিন পরও তিনি জীবিত আছেন-এরই বা সূত্র কি? এ কথাই বা কে বলেছে যে, তিনি নিষ্পাপ ও সর্বজ্ঞানীও। এসব অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের দ্বারা যদি চিন্তাশক্তিকে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়, তাহলে তো বাস্তব-অবাস্তবের পার্থক্যই হারিয়ে যাবে এবং সকল অসম্ভবকে সম্ভব মনে করার পথ খুলে যাবে!!

মিথ্যা ও অবাস্তব; বরং অসম্ভব বিষয়কে দলীল মনে করা এবং এর দ্বারা ন্যায় ও সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা থেকে আল্লাহ আমাদের সকলকে রক্ষা করুন, যা ইমামিয়া ফের্কার বৈশিষ্ট্য।’(সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩/১২১-১২২)

অতএব ইমাম মাহদীর আগমনের সহীহ আকীদা এবং শীয়াদের ঐ অলীক বিশ্বাসকে এক মনে করা অজ্ঞতা ও জাহালত ছাড়া আর কিছু নয়।

এখানে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা আরজ করলাম। বিস্তারিত জানার জন্য এই বিষয়ের কিতাবাদি মুতআলাআ করা যেতে পারে।

টীকা : * আল্লামা সাফফারিনী রাহ. (১১১৪ হি.-১১৮৮ হি.) তাঁর আকীদা বিষয়ক কিতাব‘লাওয়ামেউল আনওয়ার আলবাহিয়্যাহ’ যা শরহে আকীদাতিত সাফফারিনী নামে প্রসিদ্ধ। এই কিতাবে (২/৮৪) তিনি লিখেন-

وقد كثرت بخروجه الروايات حتى بلغت حد التواتر المعنوي وشاع ذلك بين علماء السنة حتى عد من معتقداتهم وقد روي عمن ذكر من الصحابة وغير من ذكر منهم رضي الله عنهم بروايات متعددة وعن التابعين من بعدهم ما يفيد مجموعه العلم القطعي فالإيمان بخروج المهدي واجب كما هو مقرر عند أهل العلم ومدون في عقائد أهل السنة والجماعة

اترك تعليقاً

لن يتم نشر عنوان بريدك الإلكتروني. الحقول الإلزامية مشار إليها بـ *

هذا الموقع يستخدم Akismet للحدّ من التعليقات المزعجة والغير مرغوبة. تعرّف على كيفية معالجة بيانات تعليقك.