হতাশা নয় ফিরে আসি রব্বের কাছে হাফেজ মাওলানা মুফতী মিসবাহুদ্দীন

সবার দুয়ার বন্ধ হলেও আমার রব্বের দুয়ার সর্বদাই উন্মুক্ত!

বর্তমান সময়ের দীর্ঘ অবসরতা ও কর্মহীনতার কারণে সর্বত্রই অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। কারো স্থায়ী এবং কারো অস্থায়ী সংকট দেখা দিয়েছে। ধীরে ধীরে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে সামনের দিনগুলো কাটবে কিভাবে তা নিয়ে অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন। মালিক মহাজন দায়িত্বশীলরা সবাই এখন ‘ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী’তে ব্যাস্ত। উপায় না পেয়ে কেউ কেউ হাত পাতছেন বা বিত্তবানদের দারস্থ হচ্ছেন। সেখান কেউ পাচ্ছেন আবার কেউ নিরাশ হচ্ছেন। কোন কোন ধণী লোক দায়িত্বজ্ঞাহীনতা ও দাম্ভিকতার কারণে নির্দয়ভাবে অনেককে কষ্টও দিয়ে নির্বিঘ্নে চলছেন। কেউ কেউ ধনীদের খোঁটায় আঘাতপ্রপ্ত হচ্ছেন। যদিও সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা এবং ব্যাক্তি উদ্যোগে অনেক সাহায্য সহযোগীতার ব্যাবস্থা করা হলেও তা চামুচ দিয়ে পানি ঢেলে পুকুর ভরার ন্যায় ব্যার্থ চেষ্টা ছাড়া আর কি? তাছাড়া দুর্ণীতিবাজ ত্রাণদাতারাই তো বড় গরীব ও অসহায়। সেখান থেকে প্রকৃত অসহায়রা যে একটু আধটু পাচ্ছে তাইতো বেশি।
তবে এগুলোও হয়তো একদিন ফুরিয়ে যাবে। তখন আজকের দাতারাও হয়তো নিজেদের চিন্তা শুরু করবে। অতঃপর কিছুদিন পরে তারাও সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে যাবে। কি অবাক হচ্ছেন? হ্যা.. এগুলো অসম্ভব কিছু নয়। এমন কোটি কোটি অকল্পনীয় ঘটনা এই পৃথিবীতে ঘটেছে। কারন রব্বুল আলামীন যেভাবে যা ইচ্ছা করতে পারেন এব্ং করেন।
এখন কথা হচ্ছে এই মুহুর্তে আমাদের কী হবে? কীভাবে চলবো আমরা? এভাবে তাহলে শেষ হতে হবে আমদের?
না…. আমাদের অসীম ক্ষমতাধর প্রভু মহান আল্লাহ রয়েছেন। সকল দুয়ার বন্ধ হলেও আমার মালিকের দুয়ার কখনই বন্ধ হবে না। তিনি আমাদেরকে নিরাশ হতে বারণ করেছেন।
মহান আল্লাহ হলেন এই পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি ধনী গরীব সকলেরই স্রষ্টা। তিনিই সবার একমাত্র প্রতিপালক। সকল সম্পদ- মাল দৌলতের সৃষ্টিকর্তাও তিনি। তিনি অফুরন্ত ধন ভান্ডারের মালিক। তিনি সকল সৃষ্টি থেকে অমুখাপেক্ষী। তার কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। কারন তিনি ‘গনী ও মুগনী’ তিনি সকল মাখলুকের রিজিকদাতা। প্রয়োজন পূর্ণকারী। তাঁর এক নাম ‘রাজ্জাক’। তিনি পবিত্র কালাম পাকে তাঁর বান্দাদের রিজিক দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। এবং তিনিই তা দিয়ে থাকেন। এই যে ধনীদের দেখছেন তারা দান খয়রাত করে। তারা পায় কোথায়? তারা আল্লাহর কাছ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হয়েই স্বচ্ছ মনের অধীকারী হলে অন্যকে দান করে। অন্যথায় নয়।
তাই চলুন ধনী গরীব সকলেরই রিজিকদাতা মহান আল্লাহর কাছে ফিরে যাই। তাঁর কাছেই হাত পাতি। এতে তিনি অত্যন্ত খুশি হন। তিনি বান্দাকে একথা বারবার বুঝাতে চেয়েছেন যে তিনিই একমাত্র রিজিকদাতা।। পবিত্র কুরআন খুললেই আমরা দেখতে পাবো যে, আল্লাহ তা’আলা কত বড় রিজিকদাতা! তিনি কত মহান এবং কতবড় ক্ষমতাধর!
এখানে আমি পবিত্র কুরআন হতে রিজিক সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি আয়াতের বঙ্গানুবাদ তুলে ধরলাম। যেন সহজেই অনুধান করতে পারি।
আল্লাহর বানী-
১. আপনি বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তাএই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ। (সূরা আনআম ১৫১)

২. তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। (সুরা ইবরাহী, ৩২)

৩. আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাযের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোন রিযিক চাই না। আমি আপনাকে রিযিক দেই এবং আল্লাহ ভীরুতার পরিণাম শুভ। [ সুরা ত্ব- হা ১৩২]

৪. যিনি আমাকে আহার এবং পানীয় দান করেন, [ সুরা শু’য়ারা ৭৯ ]

৫. তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

৬. এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র ও সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত করেছে? তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। তাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে?
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। নিশ্চয়, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। [ সুরা আনকাবুত ১৭, ৬০-৬২ ]

৭. তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং হ্রাস করেন। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রিযিক দিয়েছেন, এরপর তোমাদের মৃত্যু দেবেন, এরপর তোমাদের জীবিত করবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এসব কাজের মধ্যে কোন একটিও করতে পারবে? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান।
তিনি আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করে। অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারা। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়। [ সুরা রূম ৩৭,৪০,৪৮ ]

৮ . লুন, আমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং পরিমিত দেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না।
বলুন, আমার পালনকর্তা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিযিক দাতা। [সুরা সাবা- ২৬, ২৯]

৯. হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। [সূরা ফাতির, ১৫]

১০. তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।
আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী।
যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?
১১. পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন [সূরা ইয়াসীন, ৩৩-৩৬]

১২.তারা কি জানেনি যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত দেন। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। [ সুরা যুমার ৫২ ]

১৩. তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান এবং তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে নাযিল করেন রুযী। চিন্তা-ভাবন া তারাই করে, যারা আল্লাহর দিকে রুজু থাকে। [ সুরা মু’মিন ১৩ ]

১৪. আকাশ ও পৃথিবীর চাবি তাঁর কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা, রিযিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী।
যদি আল্লাহ তাঁর সকল বান্দাকে প্রচুর রিযিক দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের খবর রাখেন ও সবকিছু দেখেন।
মানুষ নিরাশ হয়ে যাওয়ার পরে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং স্বীয় রহমত ছড়িয়ে দেন। তিনিই কার্যনির্বাহী, প্রশংসিত। [ সুরা শূরা ১২,১৯,২৭,২৮ ]

১৫. আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তদ্বারা বাগান ও শস্য উদগত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়। এবং লম্বমান খর্জুর বৃক্ষ, যাতে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খর্জুর, বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ এবং বৃষ্টি দ্বারা আমি মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এমনিভাবে পুনরুত্থান ঘটবে। [ সুরা ক্বাফ ৯-১১ ]

১৬. আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত। [ সুরা যারিয়া’ত :৫৮ ]

১৭. তারা যখন কোন ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। বলুনঃ আল্লাহর কাছে যা আছে, তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসায় অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। [ সুরা জুম’য়া ১১ ]

১৮. তিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব, তোমরা তার কাঁধে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক আহার কর। তাঁরই কাছে পুনরুজ্জীবন হবে।
তিনি যদি রিযিক বন্ধ করে দেন, তবে কে আছে, যে তোমাদেরকে রিযিক দিবে বরং তারা অবাধ্যতা ও বিমুখতায় ডুবে রয়েছে। [ সুরা মুলক১২,২১ ]

১৯. আল্লাহ আমাদের নিরাশ হতে নিষেধ করেছে। নিরাশ হওয়াকে তিনি অপছন্দ করেন। তিনি মুমিনের জন্য আমরণ রিজিকের পথ উন্মুক্ত করে রেখেছেন। মুমিন ‍শুধু রব্বের কাছে চেয়ে নিবে। আল্লাহ মুমিনকে হাতিয়ার দিয়ে দিয়েছেন।
এসকল আয়াতের সমর্থনে অনেক হাদিসও রয়েছে। এখন আমি তা উল্লেখ করছিনা।

ঐ সকল আমল যেগুলোর মাধ্যমে বান্দার রিজিক বৃদ্ধি পায়।

১. তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল অবলম্বন করা: আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া অবলম্বন করা, তার নির্দেশাবলি পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করা। পাশাপাশি আল্লাহর ওপর অটল আস্থা রাখা, তাওয়াক্কুল করা এবং রিজিক তালাশে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। কারণ, যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২-৩)

২. তাওবা ও ইস্তেগফার করা: অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার এবং বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও রিজিক বাড়ে।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর অন্যতম নবী ও রাসূল নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা তুলে ধরে ইরশাদ করেন, ‘আর বলেছি, ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’।
‘তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। (সূরা নূহ, আয়াত : ১০-১২)
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবূ দাঊদ : ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানি : ৬২৯১)
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (বাইহাকী : ৬৩৬; হাকেম, মুস্তাদরাক : ৭৬৭৭)

৩. আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা: আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং তাদের হক আদায়ের মাধ্যমেও রিজিক বাড়ে।
আনাস ইবন মালেক রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি : ৫৯৮৫; মুসলিম : ৪৬৩৯)

৪. রাসূলুল্লাহ (সা.) এর ওপর দরূদ পড়া: রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি দরূদ পাঠেও রিজিকে প্রশস্ততা আসে।

৫. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা: আল্লাহর রাস্তায় কেউ ব্যয় বা দান করলে তা বিফলে যায় না। সে সম্পদ ফুরায়ও না। বরং তা বাড়ে বৈ কি।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘বল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সূরা আস-সাবা’, আয়াত : ৩৯)

৬. হজ-ওমরা করা: হজ ও ওমরা পাপ মোচনের পাশাপাশি হজকারী ও উমরাকারীর অভাব-অনটন দূর করে এবং তার সম্পদ বাড়িয়ে দেয়।
আবদুল্লাহ ইব্ন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা হজ ও ওমরা পরপর করতে থাক, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেমন দূর করে দেয় কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লাকে।’ (তিরমিযী : ৮১৫; নাসাঈ : ২৬৩১)

৭. দুর্বলের প্রতি সদয় হওয়া বা সদাচার করা: মুস‘আব ইবন সা‘দ রাদিআল্লাহু আনহু যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, তিনি বোধ হয় তাঁর বীরত্ব ও শৌর্য-বীর্য হেতু অন্যদের চেয়ে নিজেকে বেশি মর্যাদাবান। সেই প্রেক্ষিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে কেবল তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক প্রদান করা হয়।’ (বুখারি : ২৮৯৬)

৮. ইবাদতের জন্য ঝঞ্ঝাটমুক্ত হওয়া: আল্লাহর ইবাদতের জন্য ঝামেলামুক্ত হলে এর মাধ্যমেও অভাব দূর হয় এবং প্রাচুর্য লাভ হয়।
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ (তিরমিযী : ২৬৫৪; মুসনাদ আহমদ : ৮৬৮১; ইবন মাজা : ৪১০৭)

৯. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা: সাধারণভাবে আল্লাহ যে রিজিক ও নিয়ামতরাজি দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা এবং তাঁর স্তুতি গাওয়া। কারণ, শুকরিয়ার ফলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন।’ (সূরা ইবরাহীম, আয়াত : ৭)

১০. অভাবের সময় আল্লাহমুখী হওয়া এবং দোয়া করা: রিজিক অর্জনে এবং অভাব দূরীকরণে প্রয়োজন আল্লাহর কাছে দোয়া করা। কারণ, তিনি প্রার্থনা কবুল করেন। আর আল্লাহ তায়ালাই রিজিকদাতা এবং তিনি অসীম ক্ষমতাবান।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সূরা আল-মু‘মিন, আয়াত : ৬০)
এ আয়াতে আল্লাহ দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন আর তিনি তা কবুলের জিম্মাদারি নিয়েছেন।
অভাবকালে মানুষের কাছে হাত না পেতে আল্লাহর শরণাপন্ন হলে এবং তাঁর কাছেই প্রাচুর্য চাইলে অবশ্যই তার অভাব মোচন হবে এবং রিজিক বাড়ানো হবে।
আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অত:পর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে তড়িৎ বা ধীর রিজিক দেবেন।’ (তিরমিযী : ২৮৯৬; মুসনাদ আহমদ : ৪২১৮)

১১. গুনাহ ত্যাগ করা, দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা: গুনাহ ত্যাগ করা, আল্লাহর দীনের ওপর অটল থাকা এবং নেকীর কাজ করা- এসবের মাধ্যমেও রিজিকের রাস্তা প্রশস্ত হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বরং তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখিরাত সর্বোত্তম ও স্থায়ী।’ (সূরা আল-আলা, আয়াত : ১৬-১৭)
আর পরকালের মুক্তি ও চিরশান্তিই যার প্রধান লক্ষ্য তার উচিত হবে রিজিকের জন্য হাহাকার না করে অল্পে তুষ্ট হতে চেষ্টা করা।
আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আ‘স রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত সফল যে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর তাকে জীবন ধারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ রিজিক দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তুষ্টও করেছেন।’ (মুসলিম : ২৪৭৩; তিরমিযী : ২৩৪৮; আহমদ : ৬৫৭২)

পরিশেষে বলব, সমস্যা দূরী করণের যত রকম বৈধ ব্যাবস্থা আছে তা আমরা গ্রহন করব, যত অনুমোদিত আসবাব আছে তা হালাল ভাবে ইখতিয়ার করবো। এতে কোন দ্বিমত নেই। তবে আমাদের এই বিশ্বাস অবশ্যই রাখতে হবে যে আমরা যতই চেষ্টা করি আল্লাহর ইচ্ছা ও সাহায্য ছাড়া কোন উপায় নেই। তিনিই সমস্যার সমাধান করবেন, তিনিই অভাব দূর করবেন। আমাদের বিরুদ্ধে যতই ষড়যন্ত্র হোক, যতই কলাকৌশল করা হোক আল্লাহর এক ইশারায় সব ওলট পালট হয়ে যাবে। যেমন এক করোনা দিয়ে আল্লাহ বিশ্বকে ওলট পালট করে দিয়েছেন। সারা বিশ্বের সব জ্ঞানী আর বিজ্ঞানীরা অসহায় হয়ে গেছে। তাই আমরা আল্লাহর ভরসা করি এবং তাঁর কাছেই কামনা করি।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.